কিডনি কেনা-বেচায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়ে র্যাব বলেছে,
তাদের দলনেতা নিজের কিডনি বিক্রি করে প্রতারিত হয়েছিলেন।
এরপর তিনিও কিডনি কেনা-বেচার একটি চক্র গড়ে তোলেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ।
গ্রেফতাররা হলেন আনিছুর রহমান, আরিফুল ইসলাম রাজিব, সালাউদ্দিন তুহিন, সাইফুল ইসলাম ও এনামুল হোসেন।
আনিছুর বাকি চার জনের নেতা। আর সাইফুল একটি ট্র্যাভেল এজেন্টের মালিক।
আনিছুরের বাড়ি টাঙ্গাইলে, রাজিবের পিরোজপুরে এবং অন্যদের বাড়ি চাঁদপুরে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আনিছুর ২০১৯ সালে ভারতে গিয়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন।
একজন দালাল তাকে প্রলুদ্ধ করেছিলেন।
আনিছুরের দাবি, যাকে তিনি কিডনি দিয়েছেন,
তার কাছ থেকে যত টাকা নেওয়া হয়, তার চেয়ে তাকে দেওয়া হয় অনেক কম।
র্যাবের ভাষ্য, ভারতে কিডনি প্রতিস্থাপনে রোগীদের ব্যাপক চাহিদা আছে ভেবে পরে নিজেই একটি চক্র গড়ে তোলেন আনিছুর।
ভারতে যারা এই কারবারে জড়িত, তাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্য।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, “অনলাইনে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং
বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ডোনার সংগ্রহ করে বৈধ ও
অবৈধভাবে বিমানে বা স্থলপথে ২০১৯ সাল থেকেই ভারতে কিডনি পাঠাতে শুরু করেন আনিছুর।”
পাঁচ জনকে গ্রেফতারের পর কিডনিদাতা এবং গ্রহীতার ভুয়া অঙ্গীকারনামা- চুক্তিপত্র, পাসপোর্ট, এটিএম কার্ড, ভারতীয় রুপি,
বাংলাদেশি টাকা জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোস্তাক জানান, কিডনি গ্রহীতা বিত্তশালী হলে কিডনিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকাও নেওয়া হত।
কিন্তু কিডনিদাতাকে দেওয়া হত ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।
ভারতের চক্রটি বাকি টাকার প্রায় অর্ধেক নিয়ে যেত।
বাকি টাকার বেশিরভাগ রাখতেন আনিছুর।
চক্রটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনের কিডনি কেনা-বেচা করেছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা বলেন,
“প্রত্যন্ত অঞ্চলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষদের টার্গেট করে টাকার লোভ দেখাত তারা।
অসুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলেও ফাঁদ ফেলত।”
চক্রটি কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা জানান,
একটি দল সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
আরেকটি দল অভাবে থাকা মানুষদের সঙ্গে কথা বলত।
ট্র্যাভেল এজেন্টের মালিক সাইফুলের নেতৃত্বে অপর দলটি রোগীদের ভারতে পার করত।
তারা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে জাল কাগজপত্রও তৈরি করত।
আনিছুর ঢাকায় বসে টাকা লেনদেনের বিষয়সহ পুরো বিষয়টি তদারকি করতেন বলেও জানিয়েছে র্যাব।