নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
আলোচিত সাত খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ছোট ভাই নুরুজ্জামান জজ ও
চাচাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এই জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার শিমরাইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এক মাস ধরে দোকানগুলো নির্মাণ করা হয়।
বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারের জন্য দোকানগুলো ভাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বিষয়টি জানলেও সওজ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘জাতীয় স্বার্থে’ সেখানে দোকানঘর করতে দেওয়া হয়েছে।
নুরুজ্জামান ‘বাংলাদেশ আওয়ামী মোটরচালক লীগ’ নামের একটি সংগঠনের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি।
তিনি আন্তজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়ন শিমরাইল শাখারও সভাপতি।
দেলোয়ার হোসেন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান পিকআপ মালিক সমিতির শিমরাইল শাখার সভাপতি।
তাঁরা দুজনই শিমরাইলে সওজের জায়গার ট্রাক টার্মিনালটি নিয়ন্ত্রণ করেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,
এক মাস আগে মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনের পাশে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের পূর্ব দিকে সওজের জায়গা দখলে নেন নুরুজ্জামান ও দেলোয়ার হোসেন।
সেখানে প্রথমে ইটের দেয়াল তৈরি করে বালু ভরাট করা হয়।
এরপর মহাসড়কের ফুটপাত ঘেঁষে বাশের খুঁটিতে টিন দিয়ে অর্ধশতাধিক দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
এগুলোর কয়েকটিতে চেয়ারটেবিল বসিয়ে বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাকি ঘরগুলো দোকান বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
প্রতিটি দোকানের জন্য অগ্রিম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা এবং মাসে ভাড়া ১০ হাজার টাকা করে হাঁকা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন কাউন্টারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
দোকানগুলোর বিপরীত পাশে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দোকানগুলোর পেছনে শিমরাইল ট্রাক টার্মিনাল। সেখানে সারি সারি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ পার্ক করা থাকে।
ট্রাক টার্মিনালের ভেতরে দুটি আলাদা জায়গায় নুরুজ্জামান ও দেলোয়ার হোসেনের আলাদা কার্যালয়।
এর পেছনে টার্মিনালের দুই পাশে হোটেল, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি ও বিভিন্ন দোকানপাট মিলে ৪০-৪৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
যার নিয়ন্ত্রণ নুরুজ্জামান ও দেলোয়ারের কাছে।
টার্মিনাল ও আশপাশের অবস্থান করা প্রতিটি ট্রাক থেকে চালক ইউনিয়ন,
মালিক সমিতি ও পাহারাদারের বেতন বাবদ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়।
টার্মিনালের ভেতরে মাদক বেচাকেনার অভিযোগ রয়েছে।
সাত খুনের ঘটনার পর এই ট্রাকস্ট্যান্ডের ভেতরে নূর হোসেনের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ফেনসিডিলসহ অস্ত্র উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
সিদ্ধিরগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা আলী নেওয়াজ বলেন, নূর হোসেন ফাঁসির দণ্ড নিয়ে কারাগারে বন্দী থাকলেও তাঁর ভাই-ভাতিজারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সওজের অফিসের বিপরীতে প্রকাশ্যে জমি দখল করে অবৈধভাবে দোকানপাট নির্মাণ করা হলেও অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
অভিযোগের বিষয়ে নুরুজ্জামান বলেন,
তাঁর চাচাতো ভাই দেলোয়ার সওজকে টাকাপয়সা দিয়ে মহাসড়কের পাশে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে দোকানগুলো নির্মাণ করেছেন।
তিনি এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
যোগাযোগ করা হলে সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন,
মহাসড়ক ছয় লেন থেকে আট লেনে সম্প্রসারণ করায় শিমরাইলের সব পরিবহন কাউন্টারগুলো ভাঙা পড়েছে।
এরপর মানবিক কারণে সেখানে তারা দোকানগুলো নির্মাণ করেছে। কাউন্টারগুলোর কারণে সমস্যা হলে সেগুলো ভেঙে দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, পরিবহন কাউন্টারগুলো ভেঙে দেওয়ায় রোদ-বৃষ্টিতে বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিল।
এ কারণে তিনি সরকারি জায়গায় অনুমতি ছাড়াই দোকানপাট নির্মাণ করে দিয়েছেন।
যাঁরা পরিবহন কাউন্টারগুলো পরিচালনা করবেন, তাঁরাই টাকা নেবেন।
সড়ক ও জনপথ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন,
সড়ক সম্প্রসারণের কাজের জন্য কাউন্টারগুলো ভেঙে ফেলার পর পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দোকানঘর নির্মাণ করেছেন।
তবে এটার কোনো অনুমোদন বা ইজারা দেওয়া হয়নি।
অনুমোদন ছাড়া সরকারি জমিতে দোকান নির্মাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
এটা ব্যক্তিস্বার্থে নয়, জাতীয় স্বার্থে করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন।