লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মাদ্রাসাছাত্রকে (১০) তিন মাস ধরে নিপীড়নের মামলা হলেও এখনো তিন শিক্ষককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশ ও সাংবাদিকের নামে মাদ্রাসার সুপারের কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে উধাও হয়ে গেছে একটি প্রতারক চক্র।
নিপীড়নের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রায়পুর ইউপি ও চরআবাবিল ইউপির মধ্যখানে একটি মাদ্রাসায়। ঘটনার পর উত্তম-মাধ্যম দেওয়ার পর ওই তিন শিক্ষক পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠান বন্ধে এবং তিন শিক্ষককে গত এক মাসেও গ্রেফতার না হওয়ায় শিশুর অভিভাবক ও সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে গত ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে রায়পুর সরকারি হাসপাতালে নিলে ডাক্তার নজরুল ইসলাম শিশুকে পরীক্ষা করে উন্নত চিকিৎসায় সদর হাসপাতালে পাঠান। তখনই এ ঘটনা জানাজানি হয়।
পলাতক তিন যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষক হলেন- কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা মাওলানা মো. রাহাত হোসেন, সিলেট সুনামগঞ্জের বাসিন্দা মাওলানা আবু হুরায়রা ও ভোলা সদরের বাসিন্দা মাওলানা আমিরুন ইসলাম।
আহত শিশুর মা বলেন, প্রায় তিন বছর আগে হেফজ বিভাগে ভর্তি করান তার শিশু ছেলেকে। মাদ্রাসার আবাসিক ভবনেই অন্য শিশুদের সঙ্গে থাকত সে। ২০ ডিসেম্বর শিশুটি ছুটিতে বাড়িতে আসলে আর মাদ্রাসায় যেতে চায় না। অনেক চাপ সৃষ্টির পর সে জানায় তিন শিক্ষক তাকে অনেক দিন ধরে পাশবিক নির্যাতন (ধর্ষণ) করে আসছে। সে রাতে ঘুমাতে পারে না, তার খুব কষ্ট হয়। তাকে মারধরও করা হয়। আবাসিকের সব ছাত্র যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখনই ওই তিন শিক্ষক তাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করত। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ এখনো তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় চরমোহনা গ্রামের বাসিন্দা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মুফতি ইসমাইল হোসেনকে (৩৫) জানালে তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড কমিটির সভাপতিসহ সদস্যদের জানান। মঙ্গলবার পরিচালনা কমিটির সামনেই প্রিন্সিপাল অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে জুতাপেটা করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেন। কয়েক দিন আগে প্রিন্সিপাল বাড়িতে এসে শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে গেছেন।
মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ইসমাইল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ২০১৯ সালে এক ভবনের ৭টি কক্ষ ভাড়া নিয়ে ৬ জন শিক্ষক এবং আবাসিক-অনাবাসিকসহ মোট ১৭০ জন শিক্ষার্থীর অধ্যায়ন চলছে। চাকরিতে যোগদানের সময় নিয়ম অনুযায়ী ওই তিন শিক্ষক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা কৌশলে মাদ্রাসার দাপ্তরিক কাগজপত্র রাখার ড্রয়ার থেকে নিজেদের কাগজ সরিয়ে নেন। পুলিশই তাদের বের করে শাস্তি দেবে।
তিরি আরও বলেন, এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশ ও সাংবাদিকের নামে আমার কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে একটি প্রতারক চক্র।
এ ঘটনায় রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাশ বলেন, তিনি সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে মাদ্রাসায় পুলিশ প্রেরণ করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হন। ব্যবস্থা নিতে ওসিকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া বলেন, ইউএনওর কাছ থেকে ঘটনাটি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠাই। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবির হোসেন এ ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন। তবে এ ঘটনায় শিশুর মা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই তিন শিক্ষককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ওসি ও সাংবাদিকের নামে মাদ্রাসা সুপারের কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।