যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের ব্যবসা আগামী ১৯ জানুয়ারির মধ্যে বিক্রি করতে হবে। মার্কিন কোনো কোম্পানির কাছে জনপ্রিয় এই অ্যাপ ওই সময়ের মধ্যে বিক্রি না করলে এটিকে নিষিদ্ধ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত এ আদেশ দেওয়ার পর টিকটকে যাঁরা কনটেন্ট তৈরি করেন, তাঁরা তাঁদের ফলোয়ারদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মে চলে যাওয়ার জন্য বলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মেটার মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম কিংবা অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন ইউটিউবের মতো প্লাটফর্মে তাদের চ্যানেলের গ্রাহক হতে টিকটকের মার্কিন কনটেন্ট তৈরিকারকেরা অনুসারীদের অনুরোধ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ১৭ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে। ফলে এটি সে দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
টিকটকে ছোট ভিডিও দেওয়া হয়। তবে অনেক সময় অবান্তর ভিডিও-ও পোস্ট করা হয়ে থাকে। আর সেগুলো তরুণ জনগোষ্ঠী বেশ পছন্দ করে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে বিজ্ঞাপন প্রকাশকারীরা। তাদের কাছ থেকে অনেক বিজ্ঞাপনদাতা সরে গেছে এবং টিকটকে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।
এর বাইরে টিকটক শপ নামের বাণিজ্যিক প্লাটফর্মও খুলেছে সামাজিক এই মাধ্যম। এটি এখন ছোট ব্যবসার জন্য একটি কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।
মার্কিন কংগ্রেসের ভয় যে টিকটকের চীনা মালিকেরা যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগাচ্ছে। কংগ্রেস একটি আইন পাস করেছে, যাতে বলা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের যে কোম্পানি, চীনের বাইটড্যান্সকে তা বিক্রি করতে হবে। নতুবা এটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। শুক্রবার আপিল আদালত এই আইনকে বহাল রেখেছে।
টিকটকের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদ ও অন্যদের হুমকি বেড়েই চলছে। অনেকেই এই হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছিলেন না। তবে শুক্রবার পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। আর মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই এটি নিষিদ্ধ হতে পারে। যদিও চাইলে সুপ্রিম কোর্টে এখনো আপিল করা যেতে পারে।
ডেমোক্রেটিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনফ্লুয়েন্সার ক্রিস মওরির টিকটেক ৪ লাখ ৭০ হাজার ফলোয়ার রয়েছেন। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো আমি বুঝতে পারছি যে এমন অনেক কিছু নিয়ে আমি কাজ করেছি, যা অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। ছোট ব্যবসায়ী ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটা যে কত বড় বিপর্যয়কর হতে পারে, তা নিয়ে কেউ কথা বলছে না। ’
টিকটক অ্যাপেও অনেকে এ নিয়ে আলোচনা করছেন। তাঁরা তাঁদের উদ্বেগ ও বিভ্রান্তির কথা তুলে ধরেছেন। কেউ কেউ বলছেন যে এই প্ল্যাটফর্মটি যে টিকবে, এমন তাঁরা মনে করছেন না। ফলে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য তাঁরা প্রস্তুত হয়ে আছেন।
টিকটকে পুরুষদের লাইফস্টাইল ভিডিও তৈরি করেন ক্রিস বাকেট। তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ১৩ লাখ। তিনি বলেন, এই প্ল্যাটফর্ম টিকে থাকবে বলে তিনি মনে করেন না। তাঁর কথায়, ‘আমি মনে করি না যে যুক্তরাষ্ট্রে এই অ্যাপের আয়ু আর আছে।’ তিনি তাঁর ফলোয়ারদের বলেছেন যে তাঁরা যেন তাঁকে ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, এক্স ও থ্রেডসে ফলো করেন।
খাবার ও ভ্রমণ নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করে স্নিপিংফরডম। অ্যাপে তাঁদের ফলোয়ারের সংখ্যা ৮ লাখ ৮৯ হাজার। তিনি বলেন, ‘আমরা এতগুলো বছর আর এত সময় দিয়ে এখানের আমাদের কমিউনিটি তৈরি করেছি।’ তবে টিকটক শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন না, তারপরও তিনি ফলোয়ারদের ইনস্টাগ্রামে যোগ দিতে বলেছেন।
অনেকে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে চেয়েছেন। টিকটক শপের পরামর্শক সারাহ জান্নাতি বলেন, তাঁর গ্রাহকেরা অবশ্য টিকটকের নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে ভয়ে নেই। ফলে ‘তাঁরা যদি আরও বাস্তব কিছু না দেখে’, তাহলে তাঁরা তাদের ব্যবসা এখান থেকে সরাবেন না।