রফতানিকারকদের মতে, হাতে তৈরি পাটপণ্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে নতুন বাজার খোঁজা, প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি সহযোগিতা পেলে পাটশিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন তারা।
খুলনার বিভিন্ন বেসরকারি পাটকলে সুতা, প্যাকিং সরঞ্জাম, স্মার্ট পাটের ব্যাগ, টব, খেলনা, জুয়েলারি, ম্যাটস, জুতা, স্যান্ডেল, ঝুড়ি, কার্পেট ও টেবিল ম্যাটসহ পাটজাত নানা বহুমুখী পণ্য তৈরি করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, দেশের বাজারসহ বহির্বিশ্বে এসব পাটপণ্যের বেশ চাহিদা থাকায় বেড়েছে রফতানি। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে খুলনা অঞ্চল থেকে পাটপণ্য রফতানি হয়েছে ৫৭৩ চালান, আর পরবর্তী ৬ মাসে ৬০৯ চালান।
২০২০ সালে পাটপণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে সাত কোটি ডলারেরও বেশি। এ অবস্থায় বিদেশে নতুন বাজার ধরতে সরকারি প্রণোদনা ও রফতানি সুবিধা বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের।
গ্রিন নারী কল্যাণ ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে পাটের সুতা দিয়ে বিভিন্ন পাটপণ্য তৈরির কাজ করছে। ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাকেরা বানু বলেন, পাটপণ্যের যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হলে সরকারকে আরও তদারকি বাড়াতে হবে। দেশের পাটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি সহায়তা পেলে আরও অনেকেই পাট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হবে।
খুলনার অন্যতম বড় পাটপণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান জুট টেক্সটাইলস মিলের ব্যবস্থাপক (রফতানি) ইউনুস আলী শিমুল বলেন, পাটপণ্য ইউরোপের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। এ জন্য সরকারি পর্যায়ে প্রণোদনাসহ সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
খুলনার আরেকটি বড় পাটপণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান আইয়ান জুট মিলের পরিচালক মো. জহির উদ্দিন রাজীব বলেন, ‘কাঁচা পাটের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া খুব জরুরি। তাতে উৎপাদন মূল্য নিয়ে ভোগান্তি কমবে আমাদের। এছাড়া পাটপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের পোর্টগুলোকেও শক্তিশালী হতে হবে।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন জরুরি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘পাট রফতানিতে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। বিদেশে আমাদের যে দূতাবাসগুলো রয়েছে, সেখানে আমাদের কর্মকর্তাদের ওইসব দেশে লিয়াজোঁ বাড়াতে হবে। আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পাট মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিদেশের বিভিন্ন মেলায় পাটপণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে।’
এদিকে পাটপণ্য রফতানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানা সুবিধা দেয়ার কথা জানিয়েছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো।
খুলনার ব্যুরো পরিচালক জিনাত আরা আহমেদ বলেন, ‘এ বছরকে সরকার পাট বর্ষ ঘোষণা করেছে। পাটপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যাতে আরও বেশি সুবিধা পায়, তার জন্য আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকব।’
তিনি জানান, পাটপণ্য উৎপাদন ও রফতানি করে এমন ১২টি প্রতিষ্ঠান আছে খুলনায়।
One Reply to “খুলনার পাটপণ্যের কদর বাড়ছে বিশ্ব বাজারে”
Comments are closed.