চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেড’ প্ল্যান্টটিতে যথাযথ নিরাপত্তা নির্দেশনা অনুসরণ না করেই অক্সিজেন উৎপাদন করা হচ্ছিল। সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের যত কারণ, ছিল গাফিলতি-অবহেলা
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা, গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ভাল্বে ত্রুটিসহ ৯ কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায় বলেন, ‘রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ রক্ষণাবেক্ষণে কিছু নিরাপত্তা গাইডলাইন অনুসরণ করতে হয়।
যথাযথভাবে তা রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে ভয়ঙ্কর হয়ে ধ্বংসাত্মক রূপ নিতে পারে। অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ হতে পারে, যথযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ না করা।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত ও পরিবেশ রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমন গাঙ্গুলী বলেন, ‘প্রত্যেকটা রাসায়নিক কারখানার যন্ত্রপাতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণের প্রাথমিক কারণ মনে হচ্ছে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়নি।
ধারণা করছি অক্সিজেন প্ল্যান্টে অনেক আগে থেকে লিকেজ ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সেদিকে নজর ছিল না। ফলে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।’
জানা যায়, সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিস্ফোরণে ৯টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে অনভিজ্ঞদের দিয়ে প্ল্যান্ট পরিচালনা।
অক্সিজেন প্ল্যান্টটি ২০১৮ সালে আধুনিকায়ন করা হয়। এতোদিন প্রশিক্ষিত কর্মীদের মাধ্যমে প্ল্যান্ট পরিচালনা করা হলেও সম্প্রতিক সময়ে কিছু অভিজ্ঞ কর্মীকে ছাঁটাই করে কর্তৃপক্ষ।
যাদের মাধ্যমে অক্সিজেন প্ল্যান্টটি পরিচালনা করা হচ্ছিল তারা তুলনামূলক অনভিজ্ঞ ছিল। এ রাসায়নিক কারখানায় অক্সিজেন উৎপাদনে নিরাপত্তা গাইডলাইন যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
যে কলাম দিয়ে সিলিন্ডারে অক্সিজেন রিফিল করা হয় তা ছিল লিকেজ।
গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ভাল্বে ত্রুটি, সিলিন্ডারের ভেতরে ফাটল, অক্সিজেন সেপারেশন (পৃথকীকরণ) কলামে অক্সিজেনের চাপ বেড়ে যাওয়া, অক্সিজেন রিফিলে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অবহেলা, সঠিকভাবে প্ল্যান্টের যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং কারখানার ভেতর দাহ্য পদার্থ কার্বন ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন সিলিন্ডার মজুদ করা।
এসব কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন,‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বাতাস পৃথকীকরণ প্ল্যান্ট থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে। এরইমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। যেগুলো রাখার অনুমোদন ছিল না।’
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, অক্সিজেন প্ল্যান্টে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল কি না তাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের যত কারণ, ছিল গাফিলতি-অবহেলা । বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’
প্রসঙ্গত, গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সীতাকুণ্ডে বিকেল সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৭ জন নিহত হন।
আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন। আহতদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকা।
ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন।
One Reply to “সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের যত কারণ, ছিল গাফিলতি-অবহেলা”
Comments are closed.