গরু আর গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণে আগ্রহ হারাচ্ছেন বগুড়ার প্রান্তিক খামারিরা। এতে প্রতিবার কোরবানির তিন থেকে চার মাস আগেই হাটে ক্ষুদ্র খামারিদের ভিড় থাকলেও এবার চিত্র একেবারেই ভিন্ন।
ঈদুল আজহার আগে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য রমজানের মাসখানেক আগে থেকেই গরুসহ অন্যান্য গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ শুরু করেন খামারিরা। কিছুটা বাড়তি উপার্জনের আশায় বাড়ির সামনে ছোট গোয়ালে দুই চারটি গরু তিন থেকে চার মাস লালন-পালন করেন বগুড়ার ক্ষুদ্র খামারিরা।
তবে চলতি বছর চিত্র পাল্টেছে। হাটে গরু বেচাকেনায় খুব বেশি তারতম্য না হলেও, ক্ষুদ্র খামারিদের উপস্থিতি নগণ্য। ইচ্ছা থাকলেও গরু ও গো-খাদ্যের ব্যয়ভার বহন করতে না পারায় পিছু হটছেন প্রান্তিক খামারিরা। বেশিরভাগ গরু কেনা হচ্ছে বড় বাণিজ্যিক খামারের জন্য।
বগুড়া ধাপের হাটের ম্যানেজার মো. আবদুল হাকিম বলেন, গরু মোটাতাজা করার জন্য যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে, তার তুলনায় বিক্রির সময় কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না। এতে বিলুপ্তির পথে ছোট খামারিরা।
এদিকে বাজারে গমের ভুসি, ধানের গুড়া, খৈল থেকে শুরু করে সব ধরনের দানাদার ফিডের দাম উর্ধ্বমুখী। হৃষ্টপুষ্টকরণের জন্য আকার ও ওজনভেদে একটি ষাঁড় গরুর জন্য দৈনিক ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে খামারিদের। অনেকে কোরবানির হাটের উদ্দেশ্যে কিনেও খরচের ভারে আগেই বিক্রি করছেন।
বাজারে ৩৭ কেজির দেশি গমের ভুসি বস্তাপ্রতি ১ হাজার ৯০০ থেকে ১ হাজার ৯৫০ টাকা, ৫০ কেজির ধানের গুড়া বস্তা প্রতি ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, ৩৭ কেজির সরিষার খৈল বস্তাপ্রতি ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ২৫ কেজির দানাদার ফিড বস্তাপ্রতি ১ হাজার ৩৮০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রান্তিক খামারিরা জানান, গো-খাদ্য ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তবে খরচের তুলনায় বাজারে মিলছে না গরুর দাম। এর জন্য আগেভাগেই গরু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।
এদিকে গতবছর জেলার ৩ লাখ ৬০ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৬৮ হাজার উদ্বৃত্ত ছিল। এবার ক্ষুদ্র খামারিদের আগ্রহ কমলেও ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
বগুড়া সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুস সামাদ জানান, এবার ক্ষুদ্র খামারিরা আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন। তবে মাঝারি ও বড় খামারিদের আগ্রহ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এবার পশুর সংখ্যা চাহিদার তুলনায় বেশি থাকবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, বগুড়ার ১২টি উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪৬ হাজার খামারি গবাদি পশুলালন-পালনের সঙ্গে যুক্ত।
One Reply to “প্রান্তিক খামারিরা বিপাকে গো-খাদ্যের দাম বাড়ায়”
Comments are closed.