শিশু চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। অথচ জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের ভাগ্যে জোটেনি মেডিকেল পরীক্ষার অন্যতম দুই অনুষঙ্গ এমআরআই ও সিটিস্ক্যান মেশিন।
প্রায় এক দশক আগে মেশিন দুটির জন্য কক্ষ প্রস্তুত রাখা হলেও সেগুলো এখন স্টোররুমে পরিণত। এ কারণে ভয়াবহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিশু ও অভিভাবকদের।
দুই মাস বয়সি মিফতাহুল জান্নাত। জন্ম থেকেই ভুগছে হার্টের সমস্যায়। বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করে বর্তমানে ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে।
ছোট্ট এই শরীরে এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তবে সমস্যা সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পেতে দরকার সিটিস্ক্যান রিপোর্ট। দুর্ভাগ্যের বিষয় হাসপাতালে নেই কোনো সিটিস্ক্যান মেশিন।
১১ মাস বয়সি আয়ানের অবস্থা যেন আরও বেশি জটিল। ফেনী থেকে আগত একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আয়ান জন্ম থেকে হার্ট, কিডনিসহ মস্তিষ্কের সমস্যায় আক্রান্ত।
বর্তমানে চিকিৎসকদের চাওয়া এমআরআই রিপোর্ট। অথচ হাসপাতালে অতিগুরুত্বপূর্ণ মেশিনটির কোনো অস্তিত্ব না থাকায় উপায় নেই দ্রুততম সময়ে চিকিৎসকদের চাহিদা পূরণের।
অভিভাবকরা বলছেন, ‘এমআরআই, সিটিস্ক্যান, ইকো বাইরে গিয়ে করাতে হচ্ছে। এতে প্রচুর ব্যয় হচ্ছে।’
এমআরআই চিকিৎসাবিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২০১৪ সাল থেকে এমআরআই রুম আছে কিন্তু সেই রুমের বর্তমান অবস্থা দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। কেননা রুমটি ব্যবহার হচ্ছে স্টোররুম হিসেবে; নেই কোনো এমআরআই মেশিন।
থরে থরে সাজানো চিকিৎসা সরঞ্জামে পরিপূর্ণ কক্ষটিই যেন হাসপাতালে আগত শিশুদের করুণ দশার নিদর্শন।
সিটিস্ক্যান কক্ষটি ব্যবহার হচ্ছে যক্ষা আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার কাজে। সেখানেও অস্তিত্ব নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রটির।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের জেনারেল পেডিয়েট্রিকস ডা. সুরভী সেন বলেন, ‘এই পরীক্ষাগুলো হাসপাতালে থাকলে বাচ্চাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে, রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সুবিধা হতো। সে সঙ্গে বাচ্চারাও ঝুঁকির সম্মুখীন কম হতো।’
স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা শিশু হাসপাতাল বর্তমানে লাভ করেছে ইনস্টিটিউটের মর্যাদা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালটিতে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বাড়লেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকা নিয়ে বিব্রত কর্তৃপক্ষও।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক. ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ঢাকা শিশু হাসপাতালে এত বছর পরও আমাদের সিটিস্ক্যান, এমআরআই মেশিন নেই।
এ জন্য রোগীদের যখন বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাই, এতে অনেক সময় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আমরা আশাবাদী, খুব শিগগিরই এখানে সিটিস্ক্যান, এমআরআই মেশিন পেয়ে যাব।’
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে অন্তত এক হাজার থেকে দেড় হাজার রোগী সেবা নিয়ে থাকে। হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যা ৬৮১টি।